নিজেকে প্রডাক্টিভ করার জন্য কিছু করনীয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
আসসালামু আলাইকুম। সুস্থ জ্ঞান এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আপনার ভেতর আর আগের মত প্রডাক্টিভিটি নাই? নিজেকে উদ্দীপিত করতে পারছেন না? কোন কাজে আটকে আছেন? কাজ করার আর উৎসাহ পাচ্ছেন না?
প্রডাক্টিভিটি নিয়ে আপনার হাজারো “না” এর সমাধান এই আর্টিকেলে পাবেন
১. লক্ষ্য সেট করা:
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র
গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকে।
মানুষের বেলায় ও এই সূত্রটি প্রযোজ্য, অন্ততপক্ষে লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে। প্রথমে নিজের জন্য লক্ষ্য সেট করুন। এই লক্ষ্যগুলি স্পষ্ট হতে হবে, তাহলে আপনি কাজের ক্ষেত্রে আরো বেশি শক্তি পাবেন।
২. পরিকল্পনা তৈরি করা:
আপনি কীভাবে আপনার সময়কে ব্যবহার করেন, তা বুঝতে সাহায্য করার জন্য আপনাকে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এছাড়াও কোনো এক সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে এবং কাজের বাইরে আপনি যা-কিছু করেন, তাও পরিকল্পনা তৈরি করুন। । এটি বিরক্তিকর শোনাতে পারে, তবে আমি কথা দিচ্ছি, এতে আপনার সময় এবং প্রচেষ্টার মূল্যায়ন হবে।
একটি পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য, ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো এক সপ্তাহে আপনি যা যা করেন, সেগুলো লিখুন। প্রতিবার আপনি যখন একটি কাজ থেকে অন্য কাজে হাত দেন, তা লিখুন। প্রতিটি কাজে আপনি কত সময় ব্যয় করছেন, তা লিখতেও ভুলবেন না। এছাড়াও আপনার বাথরুমের বিরতি এবং অ-কাজের ইমেইলগুলো, অথবা আপনার ফেসবুক নিউজফিডের পিছে আপনি যে সময় ব্যয় করেন, তাও লিখুন। শুধু এতটুকু করার মাধ্যমেই আপনি নিজেকে অমনোযোগী করার সমস্ত উপায় সম্পর্কে অধিক সচেতন হয়ে উঠবেন। প্রকৃতপক্ষে, আপনি বুঝতে পারবেন, বাস্তবেই প্রোডাক্টিভ কাজ করতে আপনি কত কম সময় ব্যয় করেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, আপনার পার্সোনাল ইমেইল বা মোবাইল ফোনটি আপনি ঘন ঘন চেক করছেন।
সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা এজন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রডাক্টিভ হওয়ার জন্য কিছু সময় নেওয়া এবং পরিকল্পনা করা উচিত যাতে আপনি যেকোনো কাজ বা লক্ষ্য প্রাপ্ত করতে পারেন।
৩. সময় ব্যবস্থাপনা করা:
আপনার সময় প্রতিনিয়ত সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। প্রাথমিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় নির্ধারণ করা ও পরের ধাপগুলির জন্য যত্নশীল পরিকল্পনা করা জরুরি। আমাদের ব্যর্থতার যে কারণগুলো আছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে টাইম ম্যানেজমেন্ট। আমরা টাইম ম্যানেজমেন্ট এ ব্যর্থ বলেই আজ আমাদের প্রোডাক্টিভিটি শূন্যের কোঠায়।
৪. নিয়মিত অনুশীলন করা:
আপনার লক্ষ্যের দিকে ধাবন ধাবন অগ্রগতি করতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করা সহজ নয় হলেও এটি প্রডাক্টিভতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোন এক বিখ্যাত লেখকের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আপনি বিভিন্ন দেশ ট্রাভেল করেন তাহলে আপনি এত বই লেখার সময় কখন পান?
তিনি উত্তরে বলেছিলেন,
“আমি যতই ব্যস্ত থাকি প্রতিদিন একটি লাইন হলেও লিখি। আর এই নিয়মিত লেখাই আজ আমাকে সেরা করেছে।”
৫. নিজেকে মৌলিক গুণাবলী ডেভেলপ করা:
কাজ করার জন্য আপনার নিজের গুণাবলী ডেভেলপ করুন। এটি অন্যদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়া এবং সমস্যা সমাধান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- আপনার সবচেয়ে বড়ো শক্তি কী?
- কেবল আপনিই করতে পারেন, এমন কাজ কী? আপনার অনন্য গুণ কী?
- কোন কাজটি আপনার কাছে অনেক সহজ বলে মনে হয়, অথচ সেই একই কাজটি করতে অন্যদের কেন বেগ পেতে হয় আপনি তা বুঝতে পারেন না?
- মানুষ কেন আপনার প্রশংসা করে? আপনি যদি এর উত্তর না জানেন, তবে আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করুন।
উক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যক্তিত্বকে সনাক্ত করতে পারবেন এবং দিনকে এমনভাবে সাজাতে পারবেন যেটা আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই।
৬. নিজের সীমানা সম্পর্কে জানা:
সময়ের সাথে মিলিয়ে চলার জন্য আপনার নিজের সীমানা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কি মনে হয়, আপনি কোথাও আটকে আছেন? সম্ভবত আপনি অনেকদিন যাবৎ গড়িমসি করছেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে কাজ করতে পারছেন না। আপনি হয়তো আপনার সাইড বিজনেসে কাজ করার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাননি। অথবা আপনি শুধুই আপনার জীবনে আটকে আছেন। আপনি কোন পথে পা বাড়াবেন, তা জানেন না।
এতে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই। আমরা মানুষ। আমরা সবসময় সম্পূর্ণরূপে অনুপ্রাণিত থাকব, এমনটা আশা করাও ঠিক না। তাই, আপনার যদি এখনো অনুপ্রেরণার ঘাটতি থাকে, দুশ্চিন্তা করবেন না। আমরা তো শুরু করছি মাত্র। নিজের উপর বিশ্বাস রেখে যে কাজ ফেলে রাখছিলেন উক্ত কাজটি আবারো শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম করে হলেও সম্পন্ন করুন।
আপনার শরীরে ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া জরুরি। আমরা অনেকে এই ভুলটা করি যে কাজে এতটাই মনোযোগী হই যে স্বাস্থ্যের দিকে একটু নজর থাকে না। মনে রাখবেন শরীর সুস্থ থাকলে আপনার কাজে আরো বেশি প্রোডাক্টিভিটি প্রকাশ পাবে।
৭. নিজেকে নিয়ে পুনরায় ভাবুন:
আপনার পরিকল্পনাগুলি কাজ করতে পারছে কিনা এবং আপনি কি পরিবর্তন করতে পারেন তা নিয়ে ভাবুন। পূর্বে যে পরিকল্পনা করেছিলেন সেগুলোর সাথে বর্তমান কাজের অগ্রগতিকে মিলিয়ে নিন।
৮. পরিস্থিতি পরিচিত করা:
আপনার পরিবেশের পরিস্থিতি জানা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার প্রডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য সাহায্য করতে পারে। পরিবেশ আমাদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
৯. আরো বেশি মনোযোগী হন:
মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হল সাব থেকে মূল্যবান সম্পদ গুলোর মধ্যে অন্যতম যা আপনার বিকাশ করা দরকার। এটি আপনার প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। যখন আপনি আপনার সব থেকে উত্তেজনাপূর্ণ সব লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য এই ক্ষমতা ব্যবহার করেন, তখন আপনি সাফল্যের এমন স্তরে পৌঁছতে পারেন যা আপনার কল্পনাতীত।
১০. পরিশ্রম এবং সঙ্গে ধৈর্য রাখা:
প্রডাক্টিভ হওয়া একটি প্রক্রিয়া যা সময় নিয়ে। নিজের ভেতরে প্রোডাক্টিভিটি আনতে হলে ধৈর্য এবং পরিশ্রমের সাথে কাজ করতে হবে।
শেষ কথা হলো, নিজেকে প্রডাক্টিভ করা শিখতে সময় লাগে এবং এটি একটি স্বয়ংস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। ধৈর্য এবং প্রতিযোগিতামূলকভাবে নিজেকে উন্নত করার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং কখনো হাল ছেড়ে দিবেন না।
Comments