কোনোকিছুর নামে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের শপথ সেই বিষয়ের অপরিসীম গুরুত্ব এবং তাৎপর্যের ইঙ্গিত দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ
“শপথ ঊষার। এবং শপথ দশ রজনীর।
[সূরা ফাজর, ৮৯: ১-২। ]
ইবনু আব্বাস, ইবনুল জুবাইর, মুজাহিদসহ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী আলিমগণের অভিমত হলো: এই আয়াতে ‘দশ রজনী’ বলতে যিলহজের প্রথম দশ দিনের কথা বোঝানো হয়েছে। ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহ এই মতটির ব্যাপারে বলেছেন যে, এটিই সঠিক মত।

✔️এই দশকের আমল সমূহ

১. যিকির-আযকার:
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ما من أيام أعظم عند الله ولا أحبُّ إليه العمل فيهن من هذه الأَيَّام العشر فأكثروا فيهن من التهليل والتحميد والتسبيح والتكبير
“এই দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এই সময়ে তাহলিল, তাহমিদ, তাসবিহ ও তাকবির বেশি বেশি করে পড়ো।

  • তাহলিল অর্থাৎ, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
  • তাহমিদ অর্থাৎ, “আলহামদু-লিল্লাহ” পড়া।
  • তাসবিহ অর্থাৎ, “সুবহানাল্লাহ”
  • তাকবির অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলা।

২. সাধ্যমতো রোজা রাখা:
অন্যসব আমলে আল্লাহ তাআলা সওয়াব বৃদ্ধি করেন সাত গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত। একমাত্র রোজা এর ব্যতিক্রম। কেননা আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসিতে বলেছেন যে, “রোযা আমার জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব।” [বুখারি, ১১০৪; মুসলিম, ১১৫১ ]
আমরা তো জানি নামাজ আল্লাহর জন্য, যিকির আল্লাহর জন্য, সমস্ত ইবাদতই আল্লাহর জন্য। কিন্তু কেন আল্লাহ তাআলা রোজার বিষয়টিই শুধু তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করলেন? আপনাদের কী মনে হয়?

এর কারণ হলো, রোজা এমন এক গোপন ইবাদত যেখানে এর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না। কেউই জানে না আপনি কি সত্যিই রোজা ছিলেন নাকি রোজার ভান করে ছিলেন। আর তাই আপনার রোজার জন্য আল্লাহ তাআলা নিজে প্রতিদান দেবেন। এইসব জান্নাতিদের আল্লাহ তাআলা বলবেন,
كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ :
“পরিপূর্ণ তৃপ্তির সঙ্গে খাও এবং পান করো, বিগত দিনে তোমরা যা (নেক আমল) করেছিলে তার প্রতিদান-স্বরূপ।” [ সূরা আল-হাক্কাহ, ৬৯: ২৪। ]
রোজা ভাঙার পূর্বমুহূর্তে রোজাদারের একটি দুআ কবুল হয়। এটাও পুরস্কার হিসেবে পেয়ে থাকে সে।

ইবরাহিম বিন হানী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর মৃত্যুর সময় রোজা অবস্থায় ছিলেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি তৃষ্ণার্ত হয়ে যান। আর তাই তাঁর পুত্র পানি নিয়ে এসে পিতাকে পান করতে বললেন। ইবরাহিম জিজ্ঞেস করলেন, “মাগরিবের ওয়াক্ত কি হয়ে গেছে?” ছেলে বলল, “না।” বাবা বললেন, “এরকম একটি দিনের জন্যই তো মানুষ আমল করে থাকে।” অতঃপর রোজারত অবস্থায়ই তিনি রবে কারিমের নিকট চলে গেলেন।
নাফিসা বিনতু হাসান বিন জাইদ নামের এক মহীয়সী নারীও মৃত্যুশয্যায় রোজা অবস্থায় ছিলেন। তাঁর পুত্র তাঁকে জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করলে তিনি বলেছিলেন-“সুবহানাল্লাহ! আমি ৩০ বছর ধরে আল্লাহর কাছে রোজা অবস্থায় মৃত্যুর জন্য দুআ করেছি, আর তুমি কিনা আমার রোজা ভাঙতে চাইছো?” এরপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতে করতে মারা গেলেন:
قُلْ لِمَنْ مَّا فِي السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ قُلْ لِلَّهِ كَتَبَ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيمَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
“বলো, আসমান ও জমিনে যা আছে তা কার? বলো, আল্লাহর জন্য; অনুগ্রহ করাকে তিনি তাঁর নীতি হিসেবে স্থির করেছেন। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারা ঈমান আনবে না।” [সূরা আনআম, ৬:১২।]

৩. যথাসম্ভব দান-সাদাকা করা:
যদিও সারা বছর জুড়ে আমাদের দান-সাদাকা করা উচিত, তবে যিলহজের প্রথম দশকে দানের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّزِقِينَ :
“বলো, আমার প্রতিপালকই তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে রিষিক প্রশস্ত করেন, আর যার জন্য ইচ্ছে সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু (সৎকাজে) ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।” [ সূরা সাবা, ৩৪: ৩৯।]
ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা দানশীল মুমিনদেরকে এই জীবনে করা সদাকার জন্য আখিরাতে তার সমপরিমাণ বা তারও অধিক প্রতিদান দিবেন।
ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আল্লাহর এই আয়াত শুনলেন:
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ، وَ مَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
“তোমরা যা ভালোবাসো, তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।” [সূরা আলি ইমরান, ৩: ১২।]
আয়াতটি শোনার পর তিনি আশেপাশে তাকালেন এবং তাঁর মালিকানাধীন এক দাসীর চেয়ে অধিক ভালোবাসার আর কিছুই পেলেন না। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সাথে সাথে ওই দাসীকে আজাদ করে দিলেন।

সাঈদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতিদিন মসজিদের ৮০ জন দরিদ্র মুসলিমকে খাওয়ানোর জন্য তাঁর ঘরে নিয়ে যেতেন। তাঁর পুত্রও উত্তরাধিকার সূত্রে আল্লাহর রাস্তায় উদারভাবে ব্যয় করার গুণটি পেয়েছিলেন। তাঁর পুত্রের নাম ছিল কায়িস বিন সাঈদ বিন উবাদা রাহিমাহুল্লাহ। তিনি যখন ধনী ছিলেন, তখন তিনি লোকদেরকে ঋণ দিতেন। একবার তিনি দারুণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিন্তু লোকেরা তাঁকে দেখতে যাওয়া থেকে বিরত থাকল। কারণ বেশিরভাগই তাঁর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে রেখেছিল। তারা ভেবেছিল যে, তিনি হয়তো দেনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। কায়িস যখন এই ব্যাপারটি জানতে পারলেন, তখন তিনি ঘোষণা করলেন, “ভ্রাতৃত্বের পথে যে ধনসম্পদ বাধা হয়ে যায়, সেই সম্পদ ধ্বংস হোক। আমি তাদের সবার ঋণ মাফ করে দিলাম।”

৪. কুরআন তিলাওয়াত:
কুরআন তিলাওয়াত তো এই দশ দিন ছাড়াও প্রতিদিনের অভ্যাস হওয়া উচিত। কুরআন তিলাওয়াতকারী বান্দারা আল্লাহ তাআলার নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। নবি কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়ল, তার জন্য রয়েছে একটি নেকি। আর একটি নেকি দশ নেকী সমতুল্য। নবিজি বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।”[ তিরমিযি, ২৯১০।]
আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে কুরআন তিলাওয়াতের সময় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবিরা কীরূপ অবস্থায় থাকতেন। তিনি বলেছিলেন যে, তাঁদের চোখ কান্নায় ভিজে যেত। পেশিগুলো সংকুচিত হয়ে যেত। ঠিক যেমনটা আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَبًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ .
“আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল- কুরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়। তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোনো হিদায়াতকারী নেই।” [সূরা যুমার, ৩৯: ২৩।]
একবার নবি কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “তুমি আমাকে একটু তিলাওয়াত করে শোনাও তো।” আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব, আপনার ওপরই তো কুরআন নাযিল হয়েছে!” নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমার মন চাচ্ছে, কারও থেকে একটু তিলাওয়াত শুনি!” এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূরা নিসা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। পড়তে পড়তে যখন এ আয়াত পর্যন্ত আসলেন:
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا
“সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব।” [সূরা নিসা (০৪): ৪১]
এতটুকু তিলাওয়াত করার পর নবিজি বললেন, “ঠিক আছে।” আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নবিজি থামতে বলার পর আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখি, তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।” [বুখারি, ৫০৫৫, ৪৫৮২, ৫০৪৯]
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, “আমাদের জন্য কুরআন হিফজ করা ছিল কঠিন, তবে মেনে চলা ছিল সহজ। তবে এমন একটা সময় আসবে যখন হিফজ করা হবে সহজ, কিন্তু এটি মেনে চলা হবে কঠিন।”
এখন তো আমরা এমন এক সময়ে আছি, যখন কুরআন হিফজেরও অভাব, আনুগত্যেরও অভাব।
মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহকে একবার দুই ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যাদের একজন সূরা বাকারা এবং আলি ইমরান তিলাওয়াত করেছে এবং অপরজন একই সময় নিয়ে কেবল সূরা বাকারা তিলাওয়াত করেছে। এদের মধ্যে কে উত্তম। তিনি উত্তর দিলেন, “উত্তম তিনি, যিনি একই সময় নিয়ে শুধু বাকারা তিলাওয়াত করেছেন। কারণ তিনি এর অর্থ অনুধাবনের জন্য বেশি সময় পেয়েছেন।”
আমরা সবাই তো রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসি এবং শেষ বিচারের দিন তাঁকে দেখার ইচ্ছা করি। তাহলে ভাবুন কী হবে, যদি তিনি আপনার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নিকট এই আয়াতটির মাধ্যমে অভিযোগ করে থাকেন:
وَقَالَ الرَّسُولُ يُرَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا :
“এবং রাসূল বলবেন, হে আমার রব! আমার জাতির লোকেরা এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করেছিল।”[সূরা ফুরকান, ২৫: ৩০।]
ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “কুরআনকে পরিত্যাগ করা হয় পাঁচ উপায়ে:

  • তিলাওয়াত শোনা পরিত্যাগ করা,
  • কুরআনের হালাল-হারাম তথা বিধিবিধান পরিত্যাগ করা,
  • ছোট-বড় যেকোনো কলহ-বিবাদের ক্ষেত্রে কুরআনের দিকে প্রত্যাবর্তন না করা,
  • কুরআনের ব্যাপকতা ও বোধগম্যতা ত্যাগ করা,
  • অসুস্থ হৃদয় নিরাময়ের জন্য কুরআনের ব্যবহার ত্যাগ করা। (হতাশা এবং অসুস্থ অনুভূতি নিরাময়ে কুরআনের পরিবর্তে অন্যান্য উপায় অবলম্বন করা)।

৫. অবিরত এবং অবিচলভাবে দুআ করতে থাকা:
যে ব্যক্তি দুআ করে না, সে আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়ে যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ
“যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন।” [তিরমিযি, ৩৩৭৩; সহীহ আল জামি, ২৪১৮; আহমাদ ১৭০১; সনদ সহীহ।]
যখন আপনি অধীরভাবে আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকবেন, তখন জেনে রাখুন আল্লাহ আপনার দুআ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। যখন উলামাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কীভাবে দুআ করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন? তাঁদের উত্তর ছিল এমন-পানিতে ডুবার সময় বাঁচার জন্য লোকেরা যেমন মরিয়া হয়ে সাহায্য চায়, আল্লাহর কাছে সেভাবে চাইলে (আল্লাহ সেই দুআ কবুল করেন)।
দুআ করার জন্য দুআ কবুলের সময়গুলো খুঁজে বের করুন। সেই সময়গুলোর অন্যতম হলো:

  • রাতের শেষ তৃতীয়াংশ,
  • ফরজ সালাতের পূর্বে আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়,
  • জুমুআর দিনে ইমাম যখন মিম্বরে অবস্থান করেন,
  • বৃষ্টির সময়,
  • সিজদারত অবস্থায় ইত্যাদি।

দুআ শুরু করুন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে। ইস্তিগফার ও তাওবা করুন। অতঃপর দুআ করার সময় নিম্নের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন। অবিচল থাকুন এবং আল্লাহর কাছে অনবরত দুআ করতে থাকুন। দুআর সাথে অন্তরকে জুড়ে নিন, ওজু অবস্থায় থাকুন, দুআর আগে সদাকা করুন। যে সময়ে দুআ কবুল হয়, সেই সময়গুলোতে দুআ করুন।

ইমাম শাওকানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যখন অন্তর প্রস্তুত থাকে, কান্না চলে আসে, অশ্রু ঝরে যায় আল্লাহর জন্য, দুআয় বান্দা অটল থাকে, তখন বোঝা যায় যে তার দুআ কবুল হয়েছে। আর সবশেষে অনুভূতি এমন হয় যে, কাঁধ থেকে যেন বিরাট এক বোঝা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”

নবিজি আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, “পবিত্র অবস্থায় শুয়ন করে, অতঃপর গভীর রাতে উঠে দুনিয়া বা আখিরাতের জন্য উত্তম কিছু চাইলে, আল্লাহ তাআলা তা প্রদান করে থাকেন।” [ইবনু মাজাহ, ৩৮৮১; সনদ হাসান।]

৬. কিয়ামুল লাইল
যারা গভীর রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করে, তাঁদের জন্য জান্নাতে স্বচ্ছ দেয়ালের প্রাসাদ প্রস্তুত আছে। এছাড়া স্বয়ং আল্লাহ তাআলা রাতের ইবাদতকারীদের প্রতি খুশি হন। আর আল্লাহ তাআলা কারও প্রতি রাজিখুশি হওয়ার অর্থ হল-সে আল্লাহর দৃষ্টিতে উত্তম। এটাই নেককারদের পথ, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার রাস্তা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“কেউই জানে না, তাদের কাজের পুরস্কার হিসেবে চোখ-জুড়ানো কী (জিনিস) তাদের জন্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” [সুরা সাজদা, ৩২: ১৭। ]

হাসান বসরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “গুনাহের ফল ছাড়া কারও কখনো রাতের সালাত ফসকে যায় না।”
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আবদুল্লাহ ইবনু কায়িস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, “হে আবদুল্লাহ! কিয়ামুল লাইল কখনো ছেড়ো না। কেননা নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা কখনো ছাড়েননি। কখনো অসুস্থতা বা দুর্বলতা বোধ করলে বসে বসে আদায় করতেন।”[আবু দাউদ, ১৩০৯।]

৭. আরাফার দিনের মর্যাদা:
আরাফার দিনের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
دم أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةً وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلَا بِكَةً فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ
“এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কী চায়? (অর্থাৎ, যা চায় আমি তাদেরকে তাই দেব)।” [মুসলিম, ১৩৪৮]

অন্য এক হাদীসে এসেছে, “আল্লাহ তাআলা আরাফায় অবস্থানরতদেরকে নিয়ে আকাশবাসীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে এলোমেলো ও ধূলিধূসরিত অবস্থায়।” [মুসনাদে আহমাদ, ২/২২৪।]

শয়তানকে আর কোনো সময়েই এই দিনের চেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় পাওয়া যায় না। কারণ হলো এই দিনে ওর আগের সমস্ত কূটচাল বৃথা হয়ে যায়। শয়তান অসহায় হবেই-বা না কেন? আরাফার ময়দানে যে মানুষেরা তাওবা করে যাচ্ছে। আর যারা হজে উপস্থিত হতে পারেনি, তাঁরাও তো রোজা রাখছে আর আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছে। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন,
يُكَفِّرُ السَّنَةَ المَاضِيَةَ وَالبَاقِيَةَ
“তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গোনাহ মোচন করে দেয়।” [মুসলিম, ১১৬২; তিরমিযি, ৬৭৬; নাসাঈ, ২৩৮২।]
হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, “চারটি জিনিস রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না-আশুরা দিনের রোজা, (যিলহজের প্রথম) দশকের রোজা, প্রতি মাসের মধ্যবর্তী সময়ে তিনটি রোজা এবং ফজরের দু রাকাআত সুন্নত নামাজ।” [ নাসাঈ, ১৪১৬, হাদীসটি হাসান।]

তবে আরাফার রোজা হাজীদের জন্য নয়, বরং যারা হজ করতে যায়নি তাদের জন্য। হাজীদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের সময় আরাফার দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি পান করেছেন।[মুসলিম, ১১২৩-১১২৩।]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় আরাফার রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।” [মুসনাদে আহমাদ, ২/৩০৪; আহমাদ শাকির বলেছেন, সনদ সহীহ।]
ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহ মন্তব্য করেন, “আলিমগণের পছ হলো আরাফার দিন বান্দা রোজা রাখবে যদি না, সে আরাফাতেই অবস্থান করে।”

৮. দশ তারিখে পশু কুরবানি
আসমান-জমিন ও দিন-রাতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা কিছু দিনকে অন্য দিনের ওপর আমল করে নেওয়ার জন্য মর্যাদা দিয়েছেন। কুরবানি এমনই একটি আমল। দশম দিনে কুরবানির আমলে রয়েছে বিরাট পুরস্কার, যারা হজে গিয়েছে এবং যারা হজে যায়নি তাঁদের উভয়দলের জন্যই। কুরবানি দেওয়ার সময় ১০ই যিলহজ থেকে এর পরের তিন দিন পর্যন্ত অর্থাৎ, ১৩ই যিলহজ পর্যন্ত। এই কুরবানি আল্লাহর তাওহিদের ঘোষণার জন্য, একমাত্র তাঁর প্রশংসার জন্য, আমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে অনুসরণের জন্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় করো এবং কুরবানি করো।” [সূরা কাউসার, ১০৮:২।]
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ الله
“বলো, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জাহানের রব।”[সূরা আনআম, ৬:১৩২।]
কিছু সংখ্যক আলিম বলে থাকেন যে, কুরবানি করা ওয়াজিব।[এটি ইমাম আবু হানিফার মাযহাব এবং অন্য-এক বর্ণনাতে ইমাম আহমাদের মত হিসেবেও উল্লেখ আছে। ইবনু তাইমিয়া এই মতটিকে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন: এ মতটি ইমাম মালিকের মাযহাবের দুইটি অভিমতের একটি কিংবা তাঁর মাযহাবের সুস্পষ্ট অভিমত এটাই।]
তবে জমহুরের মত হলো কুরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (অতীব গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ)। উভয় মতই বলে দেয় যে, সামর্থ্যবানের জন্য কুরবানি করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বক্তব্য থেকেও সেটা স্পষ্ট হয়,
من كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُصْعَ فَلَا يَقْرَ بْنَ مُصْلَانَا
“যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।” [মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা, ৩১২৩। ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী, ইমাম ইবনু হাজার সনদকে সহীহ বলেছেন।]

যখন কুরবানি দিবেন, তখন পড়তে পারেন:
بسم الله والله اكم الله تَقَبَّلُ مِنِّي وَمِن أَهْلِ الْبَيْنِي
বিসমিল্লাহি ওয়াআল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা তাকাব্বালু মিন্নি, ওয়া মিন আহলিল বাইতি।
অর্থাৎ, আল্লাহর নামে (কুরবানি করছি), আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; ইয়া আল্লাহ, আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কবুল করুন।[সহীহ মুসলিমের ১৯৬৮ এবং ১৯৬৭ নং হাদীস অনুসারে।]

আলিমগণ একমত যে, পশু কিনে কুরবানি না করে পুরোটা সদাকা করার চেয়েও কুরবানি সম্পন্ন করা উত্তম। কেননা কুরবানি নিজেই একটি ইবাদত।
সর্বোচ্চ সাতজন একটি উট বা গরু কুরবানিতে অংশীদার হতে পারে। ঘরের কর্তা নিজের জন্য এবং তার ওপর নির্ভরশীল নারী-শিশুদের পক্ষ থেকে কুরবানি করতে পারে। সাহাবারা এবং সালাফরা এমনটিই করতেন। যে ব্যক্তি কুরবানির নিয়ত করবে, কুরবানি সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তার চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত। কুরবানির পর পশুর গোশতের একাংশ নিজে খাবে; অপর অংশগুলো দিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-মিসকিনদের হক আদায় করবে।
এমনটা বাধ্যতামূলক নয় যে, কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করতে হবে। তবে নিজ হাতে কুরবানি করা সর্বোত্তম। আপনি কেবল তত্ত্বাবধানে থাকতে পারেন, অথবা অপারগ হলে কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন। কুরবানি অবশ্যই হতে হবে ঈদুল আযহার সলাতের পরে; আর শেষ সময় ১৩ই যিলহজ পর্যন্ত। যারা ঈদের সলাতের আগেই কুরবানি করে ফেলেছিল, তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তারা আবার কুরবানি করে।

৯. তাওবা ও ইস্তিগফার
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণে প্রতিদিনই তাওবা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
“নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন পবিত্রতা অর্জনকারীদের।”[সূরা বাকারা, ২: ২২২।]
নাবি মুসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দুআ করছিলেন। আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালামকে বললেন, তাঁর সাথে উপস্থিতদের মাঝে এমন একজন লোক আছে, যে চল্লিশ বছর যাবৎ গুনাহ করেই যাচ্ছে। মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর কওমের দিকে ফিরে বললেন, পাপাচারী ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই বের হয়ে যেতে হবে। কারণ তার কারণেই দুআ কবুল হচ্ছে না। ওই গুনাহগার লোকটি তখন নীরবে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ শুরু করল। যাতে তার গুনাহগুলো গোপন রাখা হয়, যেভাবে আল্লাহ ৪০ বছর ধরে সেগুলো গোপন রেখেছেন। সে অনবরত ক্ষমা চাইতে লাগল।
আল্লাহ তাআলা দেখলেন যে, লোকটি তাওবার ক্ষেত্রে আন্তরিক। তখনই আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন এবং বৃষ্টি দিলেন। মুসা আলাইহিস সালাম অবাক হয়ে গেলেন, “কেউ বের হয়ে যাওয়ার আগেই কেন বৃষ্টি হচ্ছে?”
আল্লাহ তাআলা উত্তরে বললেন, “ওই ব্যক্তির তাওবা কবুল করা হয়েছে এবং তার পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।”

এছাড়াও হাদীসে এসেছে,
كُلُّ بَنِي آدَمَ خَطَّاءُ وَخَيْرُ الْخَطَابِينَ التَّوَّابُونَ
“প্রত্যেক বনি আদমই গুনাহগার, আর গুনাহগারদের মধ্যে তারাই উত্তম, যারা তাওবা করে।” [তিরমিযি, ২৪৯৯; ইবনু মাজাহ, ৪২৫১; সহীহ আল জামি, ৪৫১৫; আলবানি সনদকে হাসান বলেছেন।]

আল্লাহ তাআলা চাইলে গুনাহকে উত্তম আমলে রূপান্তর করে দিতে পারেন। তিনি বলেন,
إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَبِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّاتِهِمْ حَسَنَتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
“তারা ব্যতীত যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, আল্লাহ তাদের গোনাহগুলোকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।” [সূরা ফুরকান, ২৫:৭০।]

আল্লাহ তাআলা সকল ধরনের গুনাহেরই তাওবা কবুল করেন এবং ক্ষমা করে দেন। তিনি বলেন,
قُلْ يَعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ .
“বলে দিন, ওহে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা যুমার, ৩৯: ৫৩।]

আমাদের তাওবা করতে যেন দেরি না হয়। কারণ, আমরা জানি না কখন আমাদের মৃত্যু এসে যাবে। কিছু বিষয় আছে যেগুলো সুন্দর তাওবার ক্ষেত্রে সাহায্য করে:

  • আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করতে পারেন, এই ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা।
  • মুসলিমদের সাথে সুন্দর আচরণ করা।
  • ইবাদত করা, যেগুলো আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক তৈরি করবে।
  • সবসময় আল্লাহর দয়ার কথা অন্তরে রাখা।
  • আল্লাহর সাথে উত্তম বন্ধুত্ব।
  • মৃত্যুকে স্মরণ করা।
  • সবর। এর দুটো দিক রয়েছে: পাপ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সবর এবং ভালো কাজ করার ব্যাপারে সবর।
  • নিজের ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
  • এটা অনুভব করা যে, প্রতিটা মানুষেরই একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন,

أدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
“তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করো।”[সূরা নাহল, ১৬: ১২৫।]
একইসাথে কিছু বিষয় এমন আছে যা বান্দার তাওবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর সেগুলো মূলত উল্লিখিত বিষয়গুলোর বিপরীত।

তাওবার নিয়ম

  • নিজের গুনাহের ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া এবং অনুশোচনার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া। উক্ত গুনাহ পুনরায় না করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর হওয়া।
  • গুনাহের কাজটি ঢেকে দেওয়ার জন্য উত্তম আমল করা। যদি গুনাহটি কোনো বান্দার হকের সাথে জড়িত হয়, তাহলে অবশ্যই তার সাথে মীমাংসা করে নেওয়া। (উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো মুসলিমের নামে গীবত করে থাকেন অথবা তার সম্পদ চুরি করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তার প্রাপ্য সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি আর এমন মনে হয় যে, এতে সমস্যা আরও বাড়বে, তাহলে যেভাবে তার গীবত করা হয়েছে, একইভাবে তার নামে ভালো ভালো কথা প্রচার করুন। অথবা তাকে তার সম্পদ পরোক্ষভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। অন্তত এতটুকু করতেই হবে)।

১০. সুন্নত ও নফল নামাজ
প্রতিদিন ১২ রাকআত সুন্নত নামাজের জন্য আপনি জান্নাতে একটি প্রাসাদ পাবেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَابَرَ عَلَى ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً مِنَ السُّنَّةِ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ
“যে ব্যক্তি প্রতিদিন নিয়মিত বারো রাকআত সুন্নাত আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর বানিয়ে দিবেন- যোহরের পূর্বে চার রাকআত, এরপর দুই রাকআত, মাগরিবের পর দুই রাকআত, এশার পর দুই রাকআত, ফজরের পূর্বে দুই রাকআত।” [ইবনু মাজাহ, ১১৪০; তিরমিযি, ৪১৪; সনদ সহীহ।]
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি সালাত আদায় করার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ, আমরা যতবার আল্লাহ তাআলার সামনে সিজদায় নত হই, ততবার আমাদের একটি করে গুনাহ ঝরে যায়। আর যতবার সিজদাহ থেকে উঠি, আল্লাহ তাআলা আমাদের আমলনামায় একটি করে সওয়ার যোগ করে দেন।

আমি আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের যাবতীয় ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। দুআ করছি, যেন আমরা তাঁর রহমত এবং ক্ষমা লাভের জন্য যিলহজের পবিত্র দিনগুলোকে কাজে লাগাতে পারি। আমিন।

Tagged in: