আল্লাহ রাববুল আলামিন মুমিন মুসলমানদের প্রতি নিয়ামাত হিসেবে ঈদ দান করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা শরীফ হিজরতের পর প্রথম হিজরীতেই শুরু হয় ঈদ । পূর্বেকার নবীদের সময় ঈদের প্রচলন ছিল না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা শরীফ হতে হিজরত করে যখন মদিনা শরীফ পৌঁছলেন তখন মদিনাবাসীরা নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দু’টি আনন্দ দিবস উদযাপন করতে দেখলেন, যে দিবসগুলোতে তারা শুধু খেলাধুলা, আমোদ-ফুর্তি করে। হযরত আনাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এ দু’দিনের কী তাৎপর্য আছে? মদিনাবাসীগণ উত্তর দিলেন- আমরা জাহেলী যুগে এ দু দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন তিনি বললেন : ‘আল্লাহ রাববুল আলামিন এ দু দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দু’টো দিন দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর।’ (সুনান আবূ দাউদ- ১১৩৪)।
হাদিস শরীফের আলোকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে ঈদের প্রকৃত অর্থ শুধু দামী, রঙ্গিন জামা, হরেক রকম মুখরোচক খাবার আর নানা ধরণের খেলাধুলা এবং আনন্দ-উৎসবের নাম-ই ঈদ নয়। ধনী গরীবের এক কাতারে নামাজে দাড়ানো শুধু ঈদ নয় বরং তাদের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনাও ঈদের উদ্দেশ্য ঈদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
“আর যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা আল্লাহর মমত্ব-বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞ হও।” (সূরা বাকারা- ১৮৫)।
বছর ঘুরে আমাদের মাঝে হাজির হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর/আজহা। মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য দুটি দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারিত করেছেন। এই দিনগুলোতে ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, “অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।” (সূরা আল কাউছার, আয়াত: ২)
ঈদের নামাজের পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। যেমন, ঈদের দুই রাকাত নামাজের কোনো আজান, ইকামত নেই। এতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির রয়েছে। সেগুলো আদায়ের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
- স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধবেন। তারপর ছানা পাঠ করবেন।
- তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন।
- তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সূরা ফাতিহা পড়ে এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন।
- তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।
- দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত উঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন।
- তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করবেন।
- নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। কোনো ধরনের কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না।
- খুতবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।
আমাদেরকে আল্লাহর বিধান এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুসরণে ঈদ উদযাপন করতে হবে। ঈদুল ফিতরে নবী সা. আমাদের জন্য কি কর্মসুচি দিয়েছেন সেটা আমাদেরকে জানতে হবে। কারণ, ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামাত। এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও একটি ইবাদাতে পরিণত হতে পারে।
Comments