ব্যবসায় এবং ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রাথমিক কারণ হলো স্পষ্টতার অভাব।
-ব্রায়ান ট্রেসি, লেখক
আশা করি, এখন পর্যন্ত, আপনার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে আপনার আরও কিছুটা স্পষ্টতা থাকা উচিত। যদি না হয়, তবে চিন্তা করবেন না। একটি লক্ষ্য তৈরি করা একটি চলমান প্রক্রিয়া যার জন্য অনেক পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন হতে পারে।
আজকে, চলুন আপনার বর্তমান লক্ষ্যগুলোর দিকে তাকাই এবং সেগুলো বড় দৃষ্টিভঙ্গিতে কতটা উপযুক্ত হবে সেটি মূল্যায়ন করি। এটি করতে, আপনার কর্ম নির্দেশিকা ব্যবহার করুন, আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য, আর্থিক লক্ষ্য, সম্পর্কের লক্ষ্য, স্বাস্থ্যগত লক্ষ্য এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলো লিখে ফেলুন।
এখন, এই লক্ষ্যগুলি কি আপনি সত্যিই চান, আসলেই চান? অথবা সেইগুলো কি আপনার বাহ্যিক পরিবেশ দ্বারা আপনার উপর আরোপ করা লক্ষ্য (সহকর্মীদের চাপ, আপনার পিতামাতার কাছ থেকে আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইত্যাদি)?
অনেক লোক অজান্তেই লক্ষ্য অনুসরণ করে যা আসলে তাদের জন্য নয় এবং তারা ভুলবশত এসবের পিছনে ছুটতে থাকে।
আপনি সঠিক কাজ করছেন কিনা তা যাচাই করতে আপনি প্রেম-ভিত্তিক বনাম ভয়-ভিত্তিক এর একটি সাধারণ মডেল বা নমুনা ব্যবহার করতে পারেন। যে কোনো সময়ে, আমরা হয় প্রেমের বা ভয়ের জন্য কাজটি করছি।
আমরা যখন ভালোবাসা থেকে কোনো কাজ করি, তখন আমাদের মনোযোগ দেওয়ার দিকে থাকে। আমাদের সময়, অর্থ বা মনোযোগ দিয়ে বা আমাদের জ্ঞান ভাগ করে আমরা বিশ্বের কাছে কিছু যোগ করার চেষ্টা করি এবং অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করি।
অপরদিকে, যখন আমরা ভয় থেকে কোনো কাজ করি, তখন আমাদের মনোযোগ পাওয়ার দিকে থাকে। আমরা বিশ্বের কাছ থেকে কিছু নেয়ার চেষ্টা করি। আমরা অন্যের টাকা নিতে চাই, তাদের কাজে লাগাতে চাই এবং এর বদলে কিছু না দিয়ে তাদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে চাই। অথবা আমরা খ্যাতি অর্জন করতে চাই বা যাকে কল্পনা করি সেই ব্যক্তিকে পেতে চাই।
গভীর স্তরে দেখতে গেলে, প্রেম-ভিত্তিক আচরণগুলো প্রাচুর্যতা থেকে আসে। আমরা যখন ভালোবাসা থেকে কাজ করি, আমরা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করি যে আমাদের যথেষ্ট আছে, আমরা যথেষ্ট আছি এবং আমরা আমাদের চারপাশের বিশ্বে অবদান রাখতে পেরে আমরা খুশি। বিপরীতভাবে, ভয় ভিত্তিক আচরণগুলো অভাবের জায়গা থেকে আসে। আমরা যখন ভয়ে কাজ করি, তখন আমরা বিশ্বকে (এবং নিজেদের) বলি যে আমরা যথেষ্ট নই এবং আমাদের পর্যাপ্ত নেই, তাই খুব দেরি হওয়ার আগে আমাদের চারপাশের জগৎ থেকে যতটা সম্ভব গ্রহণ করতে হবে। যখন আমরা তা করি, তখন আমরা ইগো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকি।
কারণ ভয়-ভিত্তিক লক্ষ্যগুলো হলো বাহ্যিক বিশ্বে পরিপূর্ণতা এবং বৈধতা পাওয়ার প্রচেষ্টা, তারা দুর্বল লক্ষ্যগুলোকে তৈরি করে। অপরদিকে প্রেমভিত্তিক লক্ষ্যগুলো ভিতর থেকে আসে এবং যেমন, তারা আরও বেশি শক্তিশালী। তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করতে সক্ষম এবং আমরা আসলে কে এবং আমরা কী বিশ্বাস করি তা বিশ্বের সাথে ভাগ করে নিতে চাই।
উদাহরণস্বরূপ, ভালোবেসে করা এমন কিছুতে কাজ করতে পারাকে আপনি উপভোগ করেন অন্য লোকেদের সাহায্য করার চেষ্টার মাধ্যমে। ভয় থেকে কাজ করা আসলে এমন লক্ষ্যের পিছনে ছোটা যেন অন্য লোকেদের মুগ্ধ করতে পারেন। পার্থক্যটা দেখেছেন? এটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন, এটি কখনো একটি বা অন্যটি নয়। সত্যিকার অর্থে, আমরা আমাদের সারা দিন ভয় ভিত্তিক এবং ভালোবাসা ভিত্তিক আচরণ ওলট পালট করতে থাকি। সেই অনুযায়ী, আপনি যদি দেখেন ভয় ভিত্তিক কাজে মগ্ন আছেন তাহলে নিজেকে দোষ দেবেন না। এটি ভালো করে খেয়াল করুন এবং পুনরায় প্রেম-ভিত্তিক আচরণের উপর মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করুন।
সুতরাং, আপনার বর্তমান লক্ষ্যগুলো কি সত্যিই আপনার? তারা কি আপনাকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারছে? নাকি তারা অন্য লোকেদের অনুমোদন পাবার চেষ্টা করছে?
আপনার কর্ম নির্দেশিকা (অ্যাকশন গাইড) ব্যবহার করে, আপনি আসলে কী অর্জন করতে চান তা লিখুন। নিশ্চিত করুন যে এটি আপনার ব্যক্তিত্ব এবং মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, এবং এটি আপনাকে সত্যিকার অর্থে আন্দোলিত করে। কল্পনা করুন যে আপনাকে কাউকে খুশি করতে হবে না এবং বিখ্যাত হওয়ারও দরকার নেই। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে কোন লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছুটতে হবে?
কল্পনা করুন যে আপনি কখনই আপনার অর্জনগুলোকে অন্য কারও সাথে ভাগ করবেন না, কোন লক্ষ্যগুলো তাহলে নির্বিশেষে আপনাকে গর্বিত করবে?
Comments