উপার্জন হলো রাসূলগণের অনুসৃত পথ। আমাদেরকে তাঁদের (কর্মপন্থা) আঁকড়ে ধরা ও তাঁদের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আল্লাহ তাদেরকে (সঠিক) পথের দিশা দিয়েছেন। সুতরাং তুমি তাঁদের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করো।” (সূরা আল-আনআম ৬:৯০)
সর্বপ্রথম যিনি জীবিকা উপার্জন করেছেন, তিনি হলেন আমাদের পিতা আদম আঃ। আল্লাহ তাআলা (তাঁকে) বলেছিলেন,
“সে (অর্থাৎ শয়তান) যেন তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়; এমন হলে কিন্তু তুমি সমস্যায় পড়ে যাবে।” (সূরা ত্ব-হা ২০:১১৭)
‘সমস্যায় পড়ে যাবে‘ মানে হলো, জীবিকার খোঁজে তোমাকে কষ্ট করতে হবে। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুজাহিদ ৪ বলেন, ‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ না করে তুমি তেল দিয়ে রুটি খেতে পারবে না।’ সাহাবি ও তাবিয়িদের বর্ণনায় আছে, আদম -কে মাটিতে নামিয়ে দেওয়া হলে, জিব্রীল ২৪ তাঁর কাছে কিছু গম নিয়ে এসে তাঁকে তা বপন করার নির্দেশ দেন। এরপর তিনি তা বপন করে তাতে পানি দেন। তারপর তা কেটে মাড়াই করে গুঁড়া করেন এবং তা দিয়ে রুটি বানান। এ কাজ শেষ করতে করতে আসরের ওয়াক্ত চলে আসে। তখন জিব্রীল তাঁর কাছে এসে বলেন, আপনার রব আপনাকে সালাম দিয়ে বলছেন,
“তুমি যদি দিনের বাকি অংশ সাওম পালন করো, তা হলে আমি তোমার ভুলত্রুটি মাফ করে দেবো এবং তোমার সন্তানদের ব্যাপারে তোমাকে সুপারিশ করার সুযোগ দেবো।”
এরপর তিনি সাওম পালন করেন; তবে তিনি ওই খাবার খাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন; তিনি দেখতে চাচ্ছিলেন, জান্নাতের খাবারে তিনি যে স্বাদ পেতেন, তা ওই খাবারে পান কি না। সেখান থেকেই সাওম পালনকারীরা আসরের পর থেকে খাবারের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠেন।
একইভাবে, নূহ আঃ ১৪ ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী। তিনি নিজে উপার্জন করে খেতেন। ইদ্রীস আঃ ছিলেন দর্জি।[হাকিম, আল-মুস্তাদ্রাক, ২/৫৯৬।] ইব্রাহীম আঃ ছিলেন বস্ত্রব্যবসায়ী, যেমনটি নবি বলেছেন,
“তোমরা বস্ত্রের ব্যাবসা কোরো; তোমাদের পিতা (ইবরাহীম খলীল) ছিলেন বস্ত্রব্যবসায়ী।”
দাউদ নিজে উপার্জন করে খেতেন।[বুখারি, ৪/৩০৩।]
বর্ণিত আছে যে, তিনি ছদ্মবেশে বেরিয়ে রাজ্যের লোকদের কাছে নিজের সামগ্রিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাইতেন। একদিন জিব্রীল এক যুবকের বেশে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দাউদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “ওহে যুবক! দাউদকে তুমি কেমন জানো?” তিনি বলেন, “হ্যাঁ, দাউদ (আল্লাহর) অত্যন্ত উত্তম বান্দা; তবে তাঁর মধ্যে একটি বিশেষ স্বভাব আছে!” দাউদ জানতে চান, “কী সেটি?” তিনি বলেন, “তিনি বাইতুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) থেকে নিজের খাওয়া-খরচ নেন; সর্বোত্তম মানুষ সে-ই, যে নিজে উপার্জন করে খায়।” এরপর দাউদ নিজের সালাত আদায়ের জায়গায় এসে অত্যন্ত বিনীতভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আল্লাহ তাআলাকে বলেন,
“হে আল্লাহ! আমাকে জীবিকা উপার্জনের একটি মাধ্যম শিখিয়ে দাও, যার মাধ্যমে তুমি আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেবে।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বর্ম বানানোর কৌশল শেখান এবং তাঁর জন্য লোহাকে এত নরম করে দেন যে, লোহা তাঁর হাত হয়ে অন্যদের কাছে গেলে তা আটার খামির মত হয়ে যেত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“দাউদকে আমি নিজের কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছি। (আমি হুকুম দিলাম) হে পর্বতমালা! তার সঙ্গে একাত্ম হও! (এবং এ হুকুমটি আমি) পাখিরদের (ও) দিয়েছি। আর আমি তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছি।” (সাবা ৩৪:১০)
মহামহিম আল্লাহ বলেন,
“আর তোমাদের উপকারের জন্য আমি তাকে বর্ম-নির্মাণ-শিল্প শিখিয়েছি, যাতে সে তোমাদেরকে পরস্পরের আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে।” (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮০)
তিনি বর্ম বানিয়ে প্রত্যেকটিকে বারো হাজারের বিনিময়ে বিক্রি করতেন। উপার্জিত অর্থ থেকে নিজে খেতেন এবং দান-সদাকা করতেন।
সুলাইমান তালপাতা দিয়ে বড় বড় ঝুড়ি বানিয়ে জীবিকা লাভ করতেন। যাকারিয়্যা ছিলেন কাঠমিস্ত্রী।[মুসলিম, ১৫/১৩৫।]
ঈসা ১১ জীবিকা নির্বাহ করতেন তাঁর মায়ের চরকা দিয়ে; আবার কখনও কখনও শস্যের শিষ সংগ্রহ করে খেতেন, এটিও এক ধরনের উপার্জন।
আমাদের নবি কখনও কখনও মেষ চরিয়েছেন। বর্ণিত আছে যে, একদিন তিনি তাঁর সাহাবিদের বলেন,
“আমি ছিলাম উকবা ইবনু আবী মুআইত-এর রাখাল। আল্লাহ তাআলা এমন কোনও রাসূল পাঠাননি, যাকে দিয়ে তিনি রাখালের দায়িত্ব পালন করাননি।” [বুখারি, ৪/৪৪১।]
সাইব থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা শুরাইক বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সঃ ছিলেন আমার (কারবারের) অংশীদার; আর তিনি ছিলেন সর্বোত্তম অংশীদার।
না তিনি কোনও ঝগড়া করতেন, আর না কোনও গালিগালাজ।’ তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আপনারা কোন কারবারে অংশীদার ছিলেন?’ তিনি বলেন, ‘চামড়ার কারবারে।
আল্লাহর রাসূল জুরফ[মদিনা থেকে শাম অভিমুখে ৩ মাইল দূরত্বে অবস্থিত একটি জায়গা ] এলাকায় একটি জমিতে বীজ বপন করেছিলেন, যেমনটি ইমাম মুহাম্মাদ তার (আল-আসল গ্রন্থের) চাষাবাদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি জানাতে চেয়েছেন যে, উপার্জন করা হলো রাসূলগণের অনুসৃত পথ।
Comments