‘হে আমার পুত্র! আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক একটি বড়ো জুলুম। হে আমার পুত্র! সালাত কায়েম করো, ভালো কাজের আদেশ করো, মন্দ কাজ থেকে বাধা প্রদান করো এবং বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয়ই এটি মজবুত সংকল্পের কাজ। দম্ভ করে মানুষদের অবজ্ঞা করবে না, জমিনে ঔদ্ধত্যের সাথে চলাফেরা করবে না। কারণ, আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। চলাফেরায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর রাখবে সংযত। নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার ধ্বনি।’ (সূরা লোকমান)
তরুণ প্রজন্মকে শুধু নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক কিংবা চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষা প্রদানই যথেষ্ট নয়; তাদের ইসলামি শিক্ষায়ও শিক্ষিত করতে হবে। শ্রেণিকক্ষগুলোতে এখন নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কেও শিক্ষা প্রদান করা হয়। যেমন: স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, পরমত সহিষ্ণুতা ও সমতা। এ সকল বিষয় শিশুদের বৈষয়িক উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়। কোনো শিক্ষাব্যবস্থা যদি পৃথিবীতে আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়টি এড়িয়ে যায়, তাহলে এই সকল বৈষয়িক জ্ঞান প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজেই আসবে না।
সন্তানের জন্য আর্টস ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত শিক্ষা অর্জন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সমস্ত জ্ঞান যেন নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং অনুশীলনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই ধরনের ভিত্তি তৈরি করতে হবে তাদের জীবনের শুরু থেকেই। বাস্তবিক অর্থে এর মানে হচ্ছে-
একজন ব্যক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ নয়-এমন যেকোনো বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন এবং যেকোনো পেশাকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। তবে এই ক্ষেত্রে তাদের অন্তরে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কথা স্মরণ রাখেত হবে; যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন এবং যাঁর নিকট আবারও ফিরে যেতে হবে। এই ধরনের বিশ্বাস সর্বক্ষেত্রে এমন এক নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যা হালাল অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ করে; যাকে সারাজীবন অন্তরে ধারণ করতে হয়। এটি এমন একধরনের নির্দেশনা, যা তাদের মানসিক স্থিরতা, আত্মমর্যাদাবোধ, ও দৃঢ় প্রত্যয় প্রদান করে। এটি তাদের কখনো সৎ পথ থেকে বিচ্যুত হতে দেয় না। এর ফলে তারা অন্য মানুষদের প্রতি দায়িত্ববান হয় এবং আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার বিষয়টি সর্বদা স্মরণে রাখে; যেখানে সমাজের অন্যরা প্রতিনিয়তই ক্রমবর্ধমান আশা-আকাঙ্ক্ষা ও নিজের খায়েশ পূরণ করার কাজে ব্যস্ত থাকে। ইসলামের পরিমিতিবোধ ও স্বচ্ছ নিয়মকানুন আনুযায়ী শিক্ষা অর্জনকারী তরুণরা দুনিয়া ও আখিরাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারে।
ইসলামি ইতিহাসের শিক্ষার সোনালি যুগে মুসলিম শাসকরা কলা, পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্বসহ জ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখার উৎকর্ষ সাধনের প্রতি সর্বদা মনোযোগী ছিলেন। দুনিয়াবি ও ইসলামি উভয় ধরনের জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার কারণে ইসলামি সমাজগুলো অন্য সকল সমাজব্যবস্থা থেকে সমৃদ্ধ ছিল। ইউরোপীয় শিক্ষাবিদরা জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিনিয়িতই ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে আগমন করত। তখন মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থা ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। পরবর্তী সময়ে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধিপূর্বক গ্রহণ করার ফলে ইউরোপীয় সমাজে উৎকর্ষ সাধিত হয়, যা একপর্যায়ে ইউরোপীয় রেনেসাঁসে রূপ নেয়। যে সমস্ত সমাজ এই উভয় ধরনের জ্ঞান অর্জনে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, সে সমস্ত সমাজ খুব দ্রুতই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।
ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা কেবল কুরআন-হাদিস, ফিকহ ও শরিয়াহর গভীর জ্ঞান অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং জাগতিক সকল ধরনের জ্ঞান অর্জনই ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্গত। আল্লাহর ইবাদত, মানুষের সেবা, সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা এবং নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যক্তিগত অর্জন ইসলামি শিক্ষার মূল লক্ষ্য। এর ফলে আর্থিক উন্নতি ও মানসিক প্রশান্তি দুটোই অর্জিত হয়। মুসলিম বিশেষজ্ঞদের মাঝে এই ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে যে, নিম্নোক্ত বিষয়ের সঙ্গে মানুষের পরিচয় করে দেওয়াই ইসলামি শিক্ষার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত:
- আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত অধিকার (হুকুকুল্লাহ)।
- মানুষের সাথে সম্পর্কিত অধিকার (হুকুকুল ইবাদ)। নিজের পরিবার, একান্নবর্তী পরিবার, সমাজ, মেহমান, ভ্রমণকারী, গরিব, মিসকিন, বিধবা, সহকর্মী, মুসলিম, অমুসলিম সকলের সাথে আমাদের আচার- আচরণ, দায়িত্ববোধ ও লেনদেন হুকুকুল ইবাদ-এর অন্তর্ভুক্ত।
- অন্যান্য সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত অধিকার। যেমন: পশু-পাখি ও পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত অধিকারসমূহ।
- বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক জানা এবং পৃথিবীর সম্পদসমূহের ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও শারীরিক নিয়মাবলি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া।
- আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিশীল প্রজ্ঞার প্রশংসা জ্ঞাপন এবং তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গভীর অধ্যয়ন।
পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের সন্তানদের এই সমস্ত বিষয়ে কীভাবে অভ্যস্ত করতে পারি, তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
এটা পরিষ্কার, সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি স্কুলের ওপর নির্ভর করি না। সুতরাং তারা যে সময় স্কুলে থাকে না, আমাদের উচিত সে সময় তাদের শিক্ষার বাকি অংশ পূর্ণ করা।
মুসলিম চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে পিতা-মাতা ও সন্তানের জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কার্যকর প্রশিক্ষণের জন্য চমৎকার মানবীয় যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ প্রশিক্ষক প্রয়োজন, যিনি আস্থা ও আত্মবিশ্বাস অর্জনের ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করতে পারেন। এজন্যই বলা হয়ে থাকে- একটি শিশুকে গড়ে তোলার জন্য বিশাল একটি গ্রামের প্রয়োজন। যে শিশু অনুকরণীয় মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায়, সে যেকোনো জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, যেকোনো স্থানে পৌঁছতে পারে। কারণ, সে তাদের থেকে সকল ধরনের নির্দেশনা পেয়ে থাকে।
প্রথম পদক্ষেপে পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের জানতে হবে, কী কী অবলম্বন আমাদের রয়েছে। সন্তানদের পেছনে আমরা কতটুকু সময় দিতে পারব।
তাদের যথাযথ উপায়ে গড়ে তোলার জন্য কতটুকু জ্ঞান রাখি ইত্যাদি। সন্তানদের প্রতিপালনের জন্য বাইরের অনেক কিছুই প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ-পরিবার, সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় মসজিদ, ছুটির সময় ইত্যাদি।
সাধারণত, পিতা-মাতাই সন্তানদের প্রথম শিক্ষক, রোলমডেল ও প্রশিক্ষক। সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতা বিশেষ করে মায়েদের বিশেষ এক আকর্ষণ রয়েছে। এই আকর্ষণ পিতা-মাতা ছাড়া অন্য কেউ অনুভব করতে পারে না। জন্মের পর থেকেই সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতার এই ধরনের আকর্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত, এর ওপরই একটি সফল মুসলিম প্রজন্মের বেড়ে উঠা নির্ভর করে। ভালোবাসা ও দয়া এমন বিষয়, যার মাধ্যমে ভয় ও রূঢ়তাকে কাটিয়ে সন্তানদের সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে শিক্ষা প্রদান করা যায়।
উপদেশ, শাসন ও সতর্কীকরণ: পৃথিবীর বুকে যত নবি-রাসূল ও প্রজ্ঞাবান মানুষ আগমন করেছেন, তাঁদের সবাই নিজ সম্প্রদায়ের প্রশিক্ষণের জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। পবিত্র কুরআনে পুত্রকে উদ্দেশ্য করে লোকমান ৪৯-এর চমৎকার উপদেশ বর্ণিত রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়ে যথাযথ ও সংগত উপায়ে সন্তানদের উপদেশ দিতে হবে। রাসূল সাঃ মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক বিষয়ে এমনভাবে উপদেশ দিতেন, যাতে তাদের অন্তরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। উপদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি কখনো কঠোরতা অবলম্বন করতেন না।
উপমা দেওয়া এবং গল্প বলা: মানুষদের শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে পবিত্র কুরআনে পূর্বের জাতিসমূহের ঘটনা অত্যন্ত সুন্দর উপায়ে বর্ণিত হয়েছে, যাতে মানুষ সতর্ক এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। একটি ‘উত্তম কথা একটি উত্তম গাছের ন্যায়’, অপরপক্ষে ‘খারাপ বা মন্দ কথা একটি ক্ষতিকর বৃক্ষের ন্যায়।’ এই উপমাটি পবিত্র কুরআনে খুব সুন্দরভাবে বর্ণিত রয়েছে। ঈসা আঃ ও মুহাম্মাদ সাঃ সাথিদের নিকট কিছু বর্ণনা করার ক্ষেত্রে উত্তম উপমা প্রদান করতেন। রাসূল সাঃ মানুষের অর্জিত জ্ঞান ব্যবহারে সক্ষমতাকে বৃষ্টির পর মাটির প্রতিক্রিয়ার সাথে তুলনা করেছেন। মানুষের অন্তরে উপমা ও গল্পের বিরাট প্রভাব রয়েছে। এগুলো মানুষকে জীবনের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সাহায্য করে।
পিতা-মাতার উচিত সন্তানদের সামনে বাস্তব ঘটনার বর্ণনা ও উপমা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করা। প্রত্যেক সংস্কৃতিতেই ঘুমোনোর সময় শিশুদের গল্প বলার কার্যকর প্রভাব রয়েছে।
অনুকরণীয় আদর্শ: রাসূল মানবজাতির নিকট অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন (সূরা আহজাব: ২১)। তিনি অনেক কাজে সাহাবিদের সাথে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন। যেমন মসজিদে নববি নির্মাণ এবং খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননসহ আরও অনেক কাজে তিনি সাহাবায়ে কেরামদের সাথে সরাসরি কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি সর্বোত্তম পিতা, সঙ্গী ও সহযোদ্ধার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। শিশুদের কাজকর্ম ও আচার-আচরণে রোলমডেলের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। পিতা-মাতাকে সন্তানদের জন্য যোগ্য রোলমডেল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে।
পুরস্কার ও শাসন: আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী ও সৎ কর্মশীল ব্যক্তিদের পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। অন্যদিকে জাহান্নাম সৃষ্টি করছেন, তাঁর প্রতি অবিশ্বাস পোষণকারী এবং অসৎ কর্মশীলদের শাস্তির জন্য। রাসূল সাঃ সাহাবিদের উত্তম কাজের জন্য প্রশংসা এবং তাঁদের অগ্রহণযোগ্য আচরণের জন্য মাঝেমধ্যে শাসন করতেন। এই ক্ষেত্রে তিনজন সাহাবির তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রদর্শনের শাস্তি উল্লেখযোগ্য। শিশুদের জীবনের বাস্তবতা বোঝানোর ক্ষেত্রে পুরস্কার ও শাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সন্তানদের ভালোবাসার মাধ্যমে একমাত্র যৌক্তিক কারণেই শাস্তি প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি তাদের এটাও জানিয়ে রাখতে হবে, অগ্রহণযোগ্য আচরণের জন্যই তাদের শাসন করা হচ্ছে। তাদের প্রতি পিতা-মাতার নিঃশর্ত ভালোবাসার কথাও তাদের অন্তরে উপলব্ধি করাতে হবে।
- প্রাত্যহিক কাজে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সাঃ প্রদর্শিত বিধানের অনুসরণ করুন, যাতে সন্তানরাও এর সাথে পরিচিত হতে পারে। এর মধ্যে ইসলামের মৌলিক বিধিবিধান, আল্লাহর স্মরণ, বিভিন্ন সময়ে রাসূল সাঃ কর্তৃক নির্দেশিত দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনা অন্তর্ভুক্ত।
- যথাসময়ে সালাত আদায় করুন। এই ক্ষেত্রে নামাজের নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইলে আজানের টিউনকে অ্যালার্ম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে,যা দিনে পাঁচবার সালাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। মসজিদ যদি বাসার কাছেই অবস্থিত হয়, সেক্ষেত্রে পিতা-মাতার কর্তব্য হচ্ছে-নিজ সন্তানকে প্রতিনিয়ত জামাতের সাথে সালাত আদায় করতে নিয়ে যাওয়া।
- প্রাসঙ্গিক কোনো বিষয় আলোচনার ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা ও দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করুন, যা মুসলমানদের জীবনবিধানের মূল উৎস। প্রত্যেক ঘরে কুরআনের একাধিক কপি ও প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ থাকা উচিত। এই সকল গ্রন্থসমূহ দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
- নিজ ঘরে প্রত্যেক দিন কুরআন তিলাওয়াতের নিয়ম জারি রাখুন, যাতে শিশুরা এই অভ্যাসটি অর্জন করতে পারে। সিডি কিংবা মোবাইলে কুরআন তিলাওয়াত রাখতে পারেন। অবসর সময় কিংবা গাড়িতে কাটানো সময়গুলো কুরআন শ্রবণের মাধ্যমে কাজে লাগানো যেতে পারে।
- আল্লাহর সৃষ্টির অপার রহস্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা করতে সন্তানদের উৎসাহিত করুন। তাদের বোঝান, আমাদের পুরো অস্তিত্ব এবং চারিদিকের মনোরম সৃষ্টি আল্লাহর অস্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। প্রকৃতিতে ঋতুর পরিবর্তন, প্রস্ফুটিত ফুলসহ আল্লাহর সকল সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহিমা তুলে ধরুন।
- প্র্যাক্টিসিং মুসলিম পরিবারের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করুন, যাতে সন্তানরা তাদের উপযুক্ত বন্ধু সহজেই বাছাই করতে পারে।
- নিকটাত্মীয়দের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখুন। এটি শিশুদের মাঝে সমাজবদ্ধ হওয়ার দক্ষতা এবং অন্যদের সাহায্য করার আগ্রহ তৈরি করে। মানবসেবায় এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নবিদের সুন্নাহ, যা এক অনন্য সমাজ গঠনের অপরিহার্য উপাদান।
- নিয়মিত পারিবারিক বৈঠকের আয়োজন করুন। এটি পরিবারের বন্ধনকে আরও দৃঢ় এবং ইসলামি হুকুম-আহকাম সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণের আগ্রহ বৃদ্ধি করে। রাসূল ও সন্তানদের সঙ্গে পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করতেন। অভিভাবকরা পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে সন্তানদের থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। এতে তারা পারিবারিক বিষয়ে আরও আগ্রহী হয়।
- সহোদরদের মাঝে কুইজ সন্ধ্যা, মুখস্থকরণ প্রতিযোগিতার মতো বিভিন্ন জ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। ইসলাম জ্ঞান ও তাকওয়াভিত্তিক প্রতিযোগিতার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করে। এই সমস্ত প্রতিযোগিতা তরুণদের নেতৃত্বগুণের বিকাশ ঘটায়।
- সন্তানদের মুসলিম বিশ্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও সমসাময়িক বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করুন। এটি তাদের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সম্ভাবনা সম্পর্কে উপলব্ধি তৈরি করে। তারা এই সকল বিষয়ে কল্যাণ অর্জনে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হয়। নিজ ঘরে প্রতিনিয়ত সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সমসাময়িক জ্ঞান অর্জনের বিভিন্ন সামগ্রী রাখুন। এতে সন্তানরা বর্তমান বিশ্বের চলমান ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত থাকতে পারবে।
- সন্তানদের জন্য ইতিবাচক বিনোদনের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা অমূলক ও অশালীন বিনোদন থেকে বেঁচে থাকতে পারে। শিল্পকলা, বাগানে ফুলের চাষ, রান্নাবান্না, অধ্যয়ন, চিড়িয়াখানা পরিদর্শন, পার্কে নিয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক সুস্থ বিনোদন রয়েছে-যা শিশুদের শালীন উপায়ে বিনোদিত করতে পারে।
- সন্তান কোনো অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেললে যতদূর সম্ভব গায়ে হাত না তুলেই বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে তাদের শাসন করুন। এক্ষেত্রে ন্যায়নিষ্ঠতা বজায় রাখুন। এই প্রক্রিয়ায় পিতা-মাতা উভয়কেই জড়িত থাকতে হবে। যে সমস্ত পিতা-মাতা শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন, তারা জানেন-কখন, কীভাবে এই দক্ষতা প্রয়োগ করতে হয়।
ক. প্রথমে বোঝান, তার কর্মে আপনি নাখোশ
খ. তাকে সতর্ক করুন
গ. সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিন।
- সন্তানদের ক্ষমা চাইতে শেখান এবং তারা ক্ষমা চাইলে তা গ্রহণ করুন। এটি তাদের বিবেক বৃদ্ধি করে। সন্তান ক্ষমা চাইলে পিতা-মাতার উচিত বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া। সন্তানদের আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারেও শিক্ষা দিতে হবে। অন্যদিকে, পিতা-মাতারও উচিত কোনো ভুল করলে সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। এক্ষেত্রে অযথা অহমিকা ধরে রাখা উচিত না।
- সন্তানের শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। এর ফলে সহজেই জানতে পারবেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে আপনার সন্তানের কী ধরনের অগ্রগতি হচ্ছে। যে বাচ্চাদের অভিভাবক শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত কথা বলেন, স্কুলে তাদের প্রতি বেশি যত্ন নেওয়া হয়।
সর্বোপরি আপনার সন্তানের সঙ্গ উপভোগ করুন। কারণ, সন্তানের মতো করে কেউ আপনাকে ভালোবাসবে না কিংবা যত্নও নিতে পারবে না। পিতা-মাতা হওয়া সত্যিই বিশাল এক নিয়ামত ও সুযোগ। সুতরাং অভিভাবকত্বের এই মূল্যবান সময়টা উপভোগ করুন।
Comments