💡বক্তৃতা প্রদানের সময় লক্ষণীয় কতিপয় বিষয়

১. বক্তৃতা শুরুর আগে শ্রোতাদের দিকে তাকানো বক্তৃতা শুরু করার আগে শ্রোতাদের প্রতি তাকিয়ে তাদের বসার পদ্ধতি এক নজর দেখে নেওয়া উত্তম।
২. ভূমিকাতেই মূল পয়েন্টগুলো বলা ভূমিকা আকর্ষণীয় হওয়া দরকার যেন শ্রোতার মনে শোনার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ভূমিকাতেই শ্রোতার মাঝে এই বিশ্বাস জন্মাতে হবে যে, আপনি যা বলছেন তা খুবই জরুরি।
৩. পর্যায়ক্রমে পয়েন্ট ব্যাখ্যা ও কথার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা: বক্তৃতা সাজানো- গোছানো হওয়া দরকার। তাহলে শ্রোতার পক্ষে বুঝতে সহজ হয়। এক্ষেত্রে পয়েন্টের ধারাবাহিকতা ও পূর্বাপর সামঞ্জস্য রক্ষা করা দরকার।
৪. নতুন কোনো তথ্য তুলে ধরা: বক্তব্যে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরা যা শ্রোতাদের কাছে নতুন মনে হবে।
৫. উপসংহার: উপসংহারে হৃদয়গ্রাহী, চমৎকার কথা বলা। শেষ কথাগুলোই মানুষের মনে বেশি ভাসে। তাই কথা শেষ করার সময় মূল পয়েন্ট আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভালো।
৬. আত্মবিশ্বাস রাখা-নার্ভাস না হওয়া: অনেকেই বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালে নার্ভাস হয়ে পড়েন। এর ফলে জানা অনেক কথাই তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব হয় না। ইতঃপূর্বে সাজানো বক্তৃতা গুছিয়ে বলতে পারেন না। বক্তৃতা রাখার সময় নার্ভাস হয়ে পড়লে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা দরকার।
৭. হাসি-খুশি থাকা: সাধারণত বক্তৃতা রাখার সময় মুখে মিষ্টি হাসি থাকা দরকার। কিন্তু বক্তৃতা রাখার সময় কারো কারো মুখ এত ভারাক্রান্ত দেখা যায় যে, শ্রোতাদের মনে বক্তার প্রতি করুণা হয়।
৮. নোট ব্যবহার: সাধারণত বক্তব্যের বিষয়বস্তু অনুসারে বক্তব্যের আউটলাইন নির্ধারণ করা হয় এবং সংক্ষিপ্ত নোট প্রস্তুত করা হয়। বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দাঁড়ালে কখনও কখনও নতুন প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে বক্তব্যের নোট অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। ফলে যা বলার ইচ্ছা ছিল তা বলা হয় না, প্রদত্ত বক্তব্যের সাথে প্রস্তুতির মিল থাকে না। এই ধরনের ক্ষেত্রে কখনও কখনও বক্তৃতা ভালো হয়, আবার কখনও খুবই খারাপ হয়। কারণ নতুনভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে বক্তব্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন হয়, তাই বক্তৃতা দেওয়ার সময় বক্তব্যের আউটলাইন ও নোট অনুসরণ করা ভালো। এই জন্য নোটের প্রতি মাঝে মধ্যে চোখ বুলাতে হয়, তবে নোট দেখে দেখে পড়া উচিত নয়। বই বা নোট দেখে দেখে পড়লে শ্রোতাদের শোনার আকর্ষণ কমে যাবে। অবশ্য সেমিনার কিংবা রিসার্চ স্টুডেন্টদের প্রবন্ধ দেখে দেখে পড়তে হয়।

. শ্রোতাদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করা বক্তৃতা দানকালে শ্রোতাদেরকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করা দরকার। এর ফলে শ্রোতাদের মতামত জানা যায় এবং শ্রোতাদের মনোযোগ কেমন ছিল তা-ও বোঝা যায়। এক্ষেত্রে একথা মনে করার কোনো সুযোগ নেই যে, শ্রোতাদের কোনো প্রশ্নের জবাব জানা না থাকলে লজ্জিত হতে হবে। কোনো প্রশ্নের জবাব জানা না থাকলে শ্রোতাদের সামনে অকপটে এই কথা বলা ভালো যে, দুঃখিত! এই সম্পর্কে আমার জানা নেই।

১০. সময়ের প্রতি খেয়াল রাখা কাউকে কাউকে দেখা যায় সময়ের প্রতি আদৌ খেয়াল রাখেন না। বারবার স্লিপ দেওয়ার পরও বক্তৃতা সংক্ষেপ করেন না বা শেষ করেন না। ফলে শ্রোতাদের মধ্যে বিরক্তিভাব আসে। পরবর্তী বক্তাদের সময় কমে যায়। তাই প্রবন্ধ বা বক্তৃতা উপস্থাপনের জন্য আপনার সময় জেনে নিয়ে নিজে রেকর্ডিং করে সময় ভাগ করে নিন। কোনো সভা, সমাবেশ ও সেমিনার- সিম্পোজিয়ামে বক্তৃতা রাখার সময় সময়ের গুরুত্ব দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
১১. আগের বক্তার সাথে একমত/দ্বিমত পোষণ: যেকোনো সেমিনার বা আলোচনাসভায় যারা বক্তৃতা রাখেন সকলের চিন্তা ও দর্শন এক হতে হবে এমনটি নয়। কখনও বক্তাদের পরস্পরের চিন্তার মিল থাকে। এই ক্ষেত্রে আগের বক্তার কথাকে সমর্থন করে নতুন কোনো তথ্য যোগ করতে হয়। তবে পুনরাবৃত্তি পরিহার করা উচিত। আবার কখনও পূর্ববর্তী বক্তার সাথে পরবর্তী বক্তাকে দ্বিমত পোষণ করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে আগের বক্তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বিনয়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে হয় এবং দ্বিমত পোষণের কারণ যুক্তি সহকারে উপস্থাপন করতে হয়।
১২. নিজেকে সবজান্তা মনে না করা: বক্তৃতা দেওয়ার সময় শ্রোতাদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। নিজে অনেক কিছু জানেন এমন ভাব প্রদর্শন করা ঠিক নয়। তবে আত্মবিশ্বাসের সাথে আবেদনময়ী ভাষায় বক্তৃতা উপস্থাপন করতে হবে।

১৩. নিজের গ্রেড নির্ধারণ ও নেতিবাচক কথা না বলা: নিজে অনেক কিছুই জানেন- এই ধরনের ভাব প্রকাশ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি বক্তৃতা প্রদানের সময় নিজের গ্রেড নিজে নির্ধারণ করা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কেউ কেউ বক্তব্যের শুরুতে বলে থাকেন, আমি খুব একটা ভালো বক্তা নই, আপনারা আমার চেয়ে অনেক বেশি জানেন, বিভিন্ন ধরনের ব্যস্ততার কারণে বক্তব্যের প্রস্তুতি নিতে পারি নাই, প্রোগ্রামের আয়োজকরা আগেভাগে না জানানোর কারণে আমাকে উপস্থিত বক্তৃতা দিতে হচ্ছে ইত্যাদি। এসব বলা উচিত নয়।

১৪. সর্বশেষ কথা বারবার না বলা: সর্বশেষ কথা বলার পরই উপসংহার টানা উচিত। কেউ কেউ বক্তব্যের শেষে বলেন, “আমি এখন সর্বশেষ পয়েন্ট বলতে চাই”- এ কথা বলে অনেকক্ষণ বক্তৃতা দেওয়ার পর আবার বলেন, “আমার সর্বশেষ কথা হচ্ছে।” এরপরও দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতা প্রদান করেন। এরপর যতবারই বলেন, শ্রোতারা আর বিশ্বাস করতে পারে না। সর্বশেষ কথা বক্তৃতা দেওয়ার শেষ লগ্নে একবারই বলা উচিত।

বক্তৃতা পর্যালোচনা: আপনি কোথাও বক্তৃতা রাখার পর শ্রোতাদের কারো মাধ্যমে বা নিজেই নিজের বক্তৃতা পর্যালোচনা করতে পারেন। ভবিষ্যতে আরও সুন্দরভাবে বক্তৃতা করার জন্য আত্মপর্যালোচনা জরুরি।